ফিলিস্তিনি শিশুদের ঈদ
আন্ডার গ্রাজ্যুয়েশন, ইসলামিক স্টাডিজ, বুরসা উলুদা ইউনিভার্সিটি, তুরস্ক।
সাহিত্যধর্মীয়


আপনাদের কি মনে হয়— ফিলিস্তিনের মুসলমানদের আর আমাদের হিসেব কেয়ামতের দিন একইভাবে হবে? না, হলে যে বড্ড যুলুম হয়ে যাবে। অথচ আল্লাহ তা'য়ালা কেয়ামতের দিন কারো উপর বিন্দুমাত্র যুলুম করবেন না।
তারাতো জ্বলন্ত অঙ্গারের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। তাদের কাছে সকাল যেকথা বিকেল কিংবা মধ্যরাতের মধ্যে তেমন কোনো তফাৎ নেই । সকালবেলা ব্রেকফাস্টে কী খাবে? বাচ্চাদেরকে উন্নত কোন স্কুলটায় ভর্তি করাবে? অফিস থেকে আসার সময় বউকে খুশি করার জন্য কী নিয়ে আসবে? সপ্তাহান্তে পরিবারকে নিয়ে কোথায় ঘুরতে বের হবে?—এই চিন্তাগুলো করার তাদের সেই নসীবটাই হয় নি।
আমরাতো ভোরের সূর্যটা নিয়ে কবিতা লিখি, প্রকৃতি নিয়ে কত শত উপন্যাস রচনা করি ,পাখির কিচিরমিচিরে অনুভব করি জীবনের মধুরতা, মাস শেষে প্ল্যান করি পরিবারকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাওয়ার। অথচ তারা জানেই না আগামীকাল ভোরের সূর্যটা আর দেখা হবে কিনা! তাদের কাছে প্রকৃতি মানেই হচ্ছে বিধ্বস্ত গাজা নগরী! যেখান থেকে প্রকৃতির সবুজায়নটা হারিয়ে গেছে! সুন্দর সাজানো-গোছানো ভবনগুলো দেখলে মনে হয় যেন হাজার বছর পর আবিষ্কৃত হওয়া কোনো ধ্বংসস্তূপ! যেই নগরীর ধূলিময় গাছগুলোতে পাখিদের উপস্থিতি আর দেখা যায় না; তাইতো আমাদের মতো কবিতা কিংবা উপন্যাসের পান্ডুলিপিও লেখা হয় না।
দুনিয়াব্যাপী এতো এতো মুসলমান এবং এতোগুলো মুসলিম দেশ থাকা সত্বেও অসহায় নগরীটা একাকীত্বের অন্ধকারে জালিমদের সাথে সর্বস্ব দিয়ে লড়াই করে যাচ্ছে। এই লড়াইয়ে কত মা সন্তান হারিয়েছে! কত বাবা আদরের মেয়েটাকে হারিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছে! চোখের সামনে মা-বাবা আদরের বাচ্চাটাকে জালিমদের বোমায় উড়ে যেতে দেখেছে! তাদের কাছে মৃত্যুটাই এখন ধ্বংসলীলা থেকে মুক্তির পথ মনে হয়।
আমরাতো মা-বাবার সাথে বিশাল আলিশান বাংলোতে থাকি। অথচ গাজার কত শিশু কিছু বুঝে উঠার আগেই মা-বাবাকে হারিয়েছে! আমরাতো বিভিন্ন কোর্স সেমিনার করে প্যারেন্টিং শিখি। অথচ সেই শিশুরা বুঝ হওয়ার পর থেকে পিতা-মাতাকেই দেখে নাই। বিশাল ভবনের নরম গদিতে শুয়েও আমাদের কত অভিমান, কত অভিযোগ! অথচ তাদের থাকার কোনো জায়গাই নাই! বাহারি রকমের এতো খাবার-দাবারের জমিদারীর মধ্যেও কোনোদিন মনপুত না হলে আমাদের গোমরা মুখটা আয়নায় দেখার অবস্থায় থাকে না। আমরা বাচ্চাদেরকে মারধর করে, আদর সোহাগ করেও খাওয়াতে পারিনা। অথচ কতটা ক্ষুধার্ত হলে গাজার ছোট ছোট শিশুরা বাটি হাতে নিয়ে খাবারের অপেক্ষায় থাকে! কখনো কখনো তো খাবারের জন্য ধস্তাধস্তিতে পর্যন্ত নামতে হয়। এক মুষ্টি খাবারের জন্য ভূমধ্যসাগরের কিনারায় থাকা শিশুদের আর্তনাদ দেখলে অন্তরের মধ্যে উত্তাল তরঙ্গ শুরু হয়ে যায়!
ঈদ আসলে আমাদের কত পরিকল্পনা, কত উচ্ছ্বাস, কত আনন্দ! অথচ তাদের কাছে চোখের পানি ছাড়া আর কিছুই নেই। মাঝে মাঝে আল্লাহর কাছে তাদের অভিমানী শব্দচয়নগুলো শুনলে অন্তরাত্মা ভয়ে কেঁপে উঠে! তখন মনে হয় আল্লাহ যদি কেয়ামতের দিন আমাদেরকে প্রশ্ন করে বসে— এই শিশুদের কুরবানির সাথে তোমাদের কী কুরবানি ছিল? তোমাকে তো আমি গৃহহীন, পরিবারহীন কিংবা খাবারহীন রাখি নাই! তাহলে কিসে তোমাকে আমার স্মরণ থেকে দূরে রাখল? আমার ভয় করে গাজার শিশুরা যদি কেয়ামতের দিন আঙ্গুল দিয়ে ঈশারা করে আমাদের নিরবতার জন্য অভিযুক্ত করে বসে! ছোট্ট শিশুগুলো যদি সেদিন আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে আমাদের নামে মামলা দিয়ে বসে! কে বাঁচাবে সেদিন আমাদেরকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে।
আজ সারা দুনিয়ায় তারা বড্ড একা। তাদের পাশে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই! আমাদের মিছিল, মিটিং কিংবা নতুন নতুন শ্লোগান নক্রকুলদেরকে থামাতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। আল্লাহর ওয়াদা চির সত্য। বিজয় একদিন আসবেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে— আমরা কি সেই বিজয়ের অংশীদার হবো নাকি দূর থেকে দর্শকের ভূমিকা পালন করব?