শুভেচ্ছা বার্তা

লেকচারার , অ্যারাবিক লিটারেচার ও ফিকহ আনাতোলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল মুরাদ হুদাভেন্দীগার ইমাম হাতিপ কলেজ — বুরসা,তুর্কিয়ে

অন্যান্য

আজিজ হিজলী

6/1/20251 min read

বাতায়ন” নামে একটি সাময়িকী তার প্রথম সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশনা জগতে পা রেখেছে—এই সংবাদে আমি গভীর আনন্দ ও সন্তুষ্টি অনুভব করেছি। এই মূল্যবান ও আশাব্যঞ্জক প্রয়াসের অগ্রদায়িত্ব গ্রহণকারী আমার প্রিয় শিক্ষার্থী রেদওয়ান এবং তার সঙ্গে নিরলস পরিশ্রমে যুক্ত সকল সাথীদের আমি অন্তরের গভীর থেকে অভিনন্দন জানাই। “বাতায়ন” শব্দটির বাংলা অর্থ “জানালা”—এটি এই উদ্যোগের তাৎপর্যকে আরও গভীরতর করে তোলে। সত্যিই, এই প্রকাশনা কেবল তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম নয়; এটি এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, এক নতুন উপলব্ধি এবং এক নতুন নির্মাণের মানসিক জানালা।

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন: “যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে?” (সূরা যুমার, ৩৯:৯)। এই আয়াত জ্ঞানের মানুষের জীবনে কতটা নির্ধারক ভূমিকা রাখে, তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। এই বক্তব্য অনুযায়ী, জ্ঞান কেবল জমাকৃত তথ্য নয়—এটি এমন একটি রত্ন যা মানুষকে উচ্চ মর্যাদা দেয়, দায়িত্ববোধ ও গভীরতা অর্জনের পথ দেখায়। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: “যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের পথে রওনা হয়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন” (তিরমিযি, ইলম, ১৯)। এই হাদীস অনুসারে, সত্যের সন্ধানই হলো সর্বোচ্চ যাত্রাপথ। “বাতায়ন”-এর প্রতিটি পংক্তি যেন এই যাত্রারই প্রতিফলন—যা হৃদয়ে উপলব্ধির বীজ বপন করে, চিন্তাকে নির্মল করে এবং মানুষকে তার নিজ সত্যের দিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।

ইসলামী জ্ঞানশাস্ত্র কেবল একাডেমিক শৃঙ্খলা নয়, বরং একটি এমন গঠনমূলক ধারা যা জীবনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে এবং মানুষকে রূপান্তরিত করে।এই জ্ঞানশাস্ত্রগুলি এমন এক ঐতিহ্যের বাহক যা জ্ঞানকে নৈতিকতা, চিন্তাকে কর্ম, এবং বুদ্ধিকে হৃদয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে। এ কারণে কোনো একটি সাময়িকীর ইসলামি জ্ঞানকে কেন্দ্র করা মানে একটি দৃষ্টিভঙ্গি নির্মাণ, একটি মানসিকতা গঠন এবং একটি ইরফানের সন্ধান। “বাতায়ন”-এ এই চেতনার প্রতিফলনই তার চিন্তাগত ও নৈতিক গভীরতাকে প্রমাণ করে।

সাময়িকীটি শিল্প, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও চিন্তার দিকেও জায়গা করে দিয়েছে—যা ইসলামের জীবনবোধের সমন্বিত ধারণারই প্রতিচ্ছবি। কেননা ইসলাম কেবল একটি ব্যক্তিগত বিশ্বাস নয়, বরং এটি সৌন্দর্যবোধ, ভাষা ও স্থাপত্যসহ এক পূর্ণাঙ্গ সভ্যতার নাম। এই দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলাম কোন নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়, কিংবা সাংস্কৃতিক ছাঁচে আবদ্ধও নয়। বরং, এটি পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পেলেও মূলত এক সার্বজনীন সত্য ও জীবনব্যবস্থা। “বাতায়ন” এই সর্বব্যাপী সভ্যতার উত্তরাধিকারকে তরুণ প্রজন্মের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার এক উজ্জ্বল মাধ্যম হয়ে উঠবে।এই সাময়িকীর আবির্ভাব ঘটেছে বাংলাদেশ নামক এক জ্ঞান-ইরফানে পরিপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী ভৌগোলিক প্রেক্ষাপটে—এটা নিজেই এক বিশাল তাৎপর্য বহন করে। এই মাটি বহু আলিম, চিন্তাবিদ ও সাধকদের জন্ম দিয়েছে—যেখানে জ্ঞান, ধ্যানে ও জনসাধারণের আত্মিক প্রজ্ঞা একত্রে মিশেছে।এমন এক পটভূমি থেকে জন্ম নেওয়া “বাতায়ন” স্থানীয় বাস্তবতা থেকে পুষ্টি নিয়ে বৈশ্বিক ইস্যুতে কণ্ঠ দেবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। এটি কেবল বাংলাদেশি তরুণদের জন্য নয়, বরং সারা উম্মাহর চিন্তাশীল যুবসমাজের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠতে পারে।

তুরস্কের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, পূর্ববর্তী প্রশাসনের সীমিত চিন্তাচর্চার পরিসর এবং অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সময় পার করার পর, বাংলাদেশ যেন এক নতুন অধ্যায়ের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। যেখানে চিন্তা, জ্ঞানচর্চা ও সাংস্কৃতিক সৃজনশীলতার জন্য অধিকতর মুক্ত পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। “বাতায়ন”-এর মতো উদ্যোগগুলো এই পরিবর্তনের অন্যতম বাস্তব নিদর্শন।

এছাড়াও, এই মহৎ যাত্রার শুরু কুরবানির ঈদের মতো অর্থবহ এক সময়ে ঘটেছে—এটি এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কুরবানি কেবল একটি ইবাদত নয়, এটি আত্মসমর্পণ, উৎসর্গ ও আল্লাহর আহ্বানে হৃদয় খুলে সাড়া দেওয়ার প্রতীক। যদি আজকের প্রজন্ম পৃথিবীকে রূপান্তর করার দাবি রাখে, তবে প্রথমেই তাদের নিজেদেরকে আল্লাহর সত্যের জন্য উৎসর্গ করার প্রস্তুতি নিতে হবে। আল্লাহর হাকিকতের জন্য আত্মাকে কুরবান করা—এটিই উম্মাহর পুনর্জাগরণের সবচেয়ে বড় আশাব্যঞ্জক পথ। “বাতায়ন” হতে পারে এই আত্মসমর্পণের ভাষা, এই ডাকের প্রতিধ্বনি।

এই উপলক্ষে, আমি কামনা করি যে, এই প্রয়াস কেবল একটি প্রকাশনা কার্যক্রম হিসেবে সীমাবদ্ধ না থেকে, নতুন লেখক, চিন্তাবিদ, শিল্পী এবং জ্ঞানসন্ধানীদের জন্য একটি চিন্তাগত আন্দোলনে পরিণত হোক। আমি আশা করি প্রতিটি নতুন সংখ্যা পাঠকদের কাছে কেবল তথ্য নয়, বরং দিকনির্দেশনা ও প্রেরণার উৎস হয়ে উঠবে।

এই কলমযাত্রাকে বরকত দানকারী প্রভুর প্রশংসা করছি এবং প্রার্থনা করছি—তিনি যেন এই পথচলার প্রতিটি ধাপে আপনাদের প্রতি তাঁর করুণা বর্ষণ করেন। আপনাদের পথ সুগম হোক, প্রয়াস মোবারক হোক এবং লক্ষ্য স্থির রাখার প্রেরণা সদা সঠিক হোক।